Sunday, May 31, 2020

কোন দিকে বাংলাদেশ এর অর্থনীতি


বিশ্বব্যাপী মহামারিতে বাংলাদেশ এর মত উদায়মান অর্থনিতি দেশকে অনেক ক্ষতির মদ্ধে ফেলেছে।যেমন ঘোষিত  লকডাউনের কারনে লোকজনকে ঘরে থাকার জন্য বাধ্য করছে।
আমি জানি এটার প্রভাব পড়বে আগামীতেও। আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিস্থিতিকে মহামারি ঘোষণা দিয়েছে।’

জাতি যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে শুরু করেছিল তখনই হঠাৎ করে আঘাত এসেছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে যেহেতু এর প্রভাব, স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। করোনা চলা অবস্থায় দেশের অর্থনীতির চাকা যেন গতিশীল ও সুরক্ষিত থাকে মানুষকে একেবারে ঘরে বন্দি না করে সীমিত আকারে জরুরি কিছু কিছু কাজ চালানোর উদ্যোগের কথাও তিনি জানান।

ক্ষুদ্রশিল্প ও হাট-বাজার চালু করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে কিছু জিনিস উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। মানুষকে সুরক্ষিত রেখে, মানুষের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে অন্যান্য শিল্প-কারখানাও পরিচালিত হতে পারে। ব্যবসার জন্য যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, ১০ টাকায় চাল কেনার জন্য আরও ৫০ লাখ রেশন কার্ড সুবিধা দেয়া হবে। যাদের আয়-উপার্জনের পথ নেই তাদের ঈদের আগে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। তিনি আবারও কৃষির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবার ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে। আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে খাবারের সমস্যা হবে না।’ কৃষির মতো তিনি পোল্ট্রি এবং দুগ্ধশিল্প রক্ষারও পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে ২৭ এপ্রিল একইভাবে গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করার সময় সকলস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মহামারির প্রাদুর্ভাব দূর হওয়ার পর খুলবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য তিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চার দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৮টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

তবে এ কথা ঠিক যে, স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। আমরা জানি করোনা মহামারিতে গত ২৬ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্রমাগত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এদেশে লকডাউনের ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ যেমন সংকটে পড়েছে, তেমনি সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও হুমকির মুখে রয়েছে।

আইএমএফ ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরুর আভাস দিয়েছে। আর বলছে, মন্দা প্রলম্বিত হলে বিশ্বে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বিশ্বব্যাপী বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এই প্রথম এমন মহামন্দা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের বা কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখন পরিষ্কার।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে করা হচ্ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেনে সমস্যা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এর ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এসবই হচ্ছে মহামারির বাস্তবতা। কিন্তু আমরা এদেশের অর্থনীতিতে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।

৩.

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের আগে এপ্রিল (২০২০) মাসের প্রথম সপ্তাহে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছিল, করোনায় বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে। তবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি। অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের আর্থিক প্রণোদনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে বলে সংস্থাটি ভেবেছে।

৩ এপ্রিল এডিবির আউটলুক ২০২০-এ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। তবে প্রবৃদ্ধি কমলেও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। এছাড়া আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আবার ৮ শতাংশ হবে। এদিকে এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে এডিবি। মহামারির কারণে যেখানে গত বছর গড়ে ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সেখানে ২০২০ সালে এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে ৮.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। তবে গবেষকদের আশা, মহামারি শেষ হলে বিদেশে কর্মী প্রেরণ ও প্রবাসীদের কর্মে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। তৈরি পোশাকের রফতানির বড় বাজারগুলোতে চাহিদা বাড়লে ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি কিছুটা এগিয়ে ৮ শতাংশে উঠতে পারে। আর কৃষি উৎপাদন তো আছেই।

গত ৫ এপ্রিল করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। প্যাকেজ ঘোষণাকালে তিনি বলেছেন- তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি- এভাবে ভাগ করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারটি কার্যক্রম নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। এই চারটি কার্যক্রম হবে- সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা, আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা।

২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি গৃহহীনদের জন্য ঘর ও খাবারের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর ৫ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে তিনি নতুন চারটি প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ সুবিধা, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফিন্যান্স স্কিম চালুর ঘোষণা দেন।

‘দ্য ইকোনমিস্ট’ যে এদেশের অর্থনীতিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলেছে তার কারণ হলো এই বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ। এই প্রণোদনা প্যাকেজে এদেশের মানুষের আর্থসামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। আর ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন হলে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব।

উপরন্তু রফতানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতিও বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সকলকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।

৪.

২০২০ সালের শুরু থেকে করোনার ধাক্কায় পৃথিবীর চিত্রই বদলে গেছে। ফলে নতুন এক অর্থনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে পৃথিবীর মানুষ। গবেষকদের মতে, করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। যেমন, সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের ওপর যে অতিনির্ভরতা গড়ে উঠেছে, তা থেকে এবার সকলেই বেরিয়ে আসতে চাইবে। সেক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ আসতে পারে ভারত, বাংলাদেশ আর ভিয়েতনামের। এ জন্য দরকার সুপরিকল্পিত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেয়া।

বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২০ শতাংশ মানুষের জীবিকার উৎস ভ্রমণ ও পর্যটন। যে দেশের অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্ব যত বেশি, সেখানে আঘাতের তীব্রতাও হবে ততটাই। কৃষিনির্ভর আমাদের দেশ এ হিসাবের বাইরে থাকবে। মহামারির কারণে অর্থনৈতিক মন্দার চাপে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০ শতাংশ শিল্প সংস্থা দেউলিয়া হতে পারে, তার সঙ্গে থাকবে অসংগঠিত বা ক্ষুদ্রশিল্পে কাজ হারানোর ভয়াবহ ভবিতব্য। এ কথা সত্য, কৃষি উৎপাদন ছাড়া স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সব খাতের উৎপাদন কার্যক্রম। শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সরকারকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।

আগেই বলা হয়েছে, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে দুই শতাংশ সুদে বাংলাদেশ সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সুখের খবর হলো- পোশাক খাতের বড় বড় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। তারা ক্রয়াদেশগুলো বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। শিপমেন্টের অপেক্ষায় থাকা পণ্য নেয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। ক্রেতাদের এমন সিদ্ধান্তের ফলে করোনার প্রভাবে যে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক ক্রয়াদেশ স্থগিত বা বাতিলের কথা বলা হচ্ছিল, এখন সেই পরিমাণ কমে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলে থাকেন, বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারে- সেই জাতিকে কেউ কখনও দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা জাতির পিতা নিজেই বলে গেছেন। কাজেই মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট দূর করার জন্য জাতির পিতার সেই অমরবাণী বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে; ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাঁর নেতৃত্বে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ভবিষ্যতে মানুষের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। সকলের কষ্ট লাঘব করাটাই বর্তমান সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।

আগামিকাল আবারো রাস্তায় চালু হচ্চে পরিবহন
  • লকডাউন এর ৬৭ তম দিন আজ।আগের দিনের সকল রেকর্ড ভেঙে আজ সবোচ্চ  মিত্যু(৪০) দেখলো দেশ।দেশে করোনার প্রোকপ দিন দিন বেরেই চলেছে।

এর ই মদ্ধে বাস পরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে  সরকার। ফলে করোনা সংক্রামক আর বেরে যেতে পারে মনে করছেন বিশেষকগন।বাংলাদেশকে যে সামনে বড়ো চ্যালেঞ্জ এর মুখমুখি হতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
বাংলাদেশে আজ সবোর্চ্চ মিত্যু, সবচেয়ে আক্রান্ত

  • করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মারা গেছেন ৪০ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫৪৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ আজকে সবচেয়ে বেশি মিত্যু দেখলো বাংলাদেশপর্যন্ত মোট মারা গেলেন ৬৫০ জন।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানানো হয়। নতুন করে মারা যাওয়া ৪০ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৩ জন ও নারী ৭ জন। সব মিলে দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৭ হাজার ১৫৩ জন।
গত২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪০৬ জন। এ নিয়ে ৯ হাজার ৭৮১ জন সুস্থ হয়েছেন।
ব্রিফিংয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৮৭৬ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। গতকাল ৯ হাজার ৯৯৭ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৪০টি নমুনা।
দেশে এখন ৫২টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা করা হয়। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
করোনার ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানায় জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, লকডাউন উঠে গেছে। এখন সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, করোনা প্রতিরোধে যা সবাইকে মেনে চলতে হবে। মাস্ক পড়া অত্যাবশ্যক।
আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। সবাইকে তামাক ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ধূমপায়ীরা করোনায় আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি এবং মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়।

Saturday, May 30, 2020

ভালবাসার প্রিয় শিক্ষক আনিসুজ্জামান

আমার প্রিয় শিক্ষক আনিসুজ্জামান সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ কোনো সন্দর্ভ রচনা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়, সে যোগ্যতাও আমার নেই। এ শুধু একজন সাংবাদিক হিসেবে কিছু স্মৃতিচারণা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।

 তাঁর প্রাঞ্জল বাচনভঙ্গিতে নীরস গদ্যও সরস হয়ে উঠত। অত্যন্ত সহজ, সরস, পরিচ্ছন্ন বক্তৃতায় পাঠ্যবিষয়টি উপস্থাপন করার স্বাভাবিক ক্ষমতা ছিল তাঁর। স্বল্পভাষী এই শিক্ষক শিক্ষকতার বাইরেও কোনো অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গেলে একইভাবে অত্যন্ত প্রাঞ্জল গদ্যে সংক্ষিপ্তভাবেই তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করতেন, অযথা বাক্য ব্যয় করে কালক্ষেপণ করতেন না।
আমার চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী ছাত্র ছিল তাঁর, কিন্তু কেন জানি না আমার প্রতি তাঁর একটু অন্য রকম স্নেহ ছিল। মনে পড়ে, আমি তখন কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের উপপরিচালক। স্যার লোক পাঠালেন আমার কাছে—মধুর ক্যানটিনখ্যাত মধুদার ওপর একটি সংকলন বের হবে, তাতে আমাকে একটি লেখা দিতে হবে। বলা বাহুল্য, তাঁর নির্দেশমতো লেখাটি দিয়েছিলাম।
কয়েক বছর আগে স্যারের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছিল, সেখানে একজন ছাত্র হিসেবে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলার জন্য নির্মাতাকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। আমি তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু বলেছিলাম। তিনি ফোন করে শিক্ষকের মতোই বলেছিলেন, ‘তোমার বলাটি ভালো হয়েছে, রবি
কয়েক বছর আগে আমার একটি রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশনা উৎসবে তাঁকে দিয়ে উদ্বোধন করানোর খুব ইচ্ছা ছিল। তাঁকে ফোন করে আমার বাসনাটি জানালাম। তিনি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, ‘আমি তো দেশের বাইরে যাচ্ছি। এবার সম্ভব হলো না, অন্য সময় বলো।’ এই ‘অন্য সময়’ আর পাওয়া গেল না। নানাবিধ ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি শিল্প-সংস্কৃতিজগতের খবর সবই রাখতেন। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক প্রতিষ্ঠিত ‘শিল্পীর পাশে’ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ছিলেন তিনি। কমিটির একজন সদস্য হিসেবে আমিও সভায় উপস্থিত থাকতাম। লক্ষ করতাম, অখ্যাত, বিখ্যাত সব শিল্পীরই তিনি খবর রাখতেন।
গত বছর ‘শিল্পীর পাশে’ ফাউন্ডেশনের তহবিল সংগ্রহের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে আমরা অনেকেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েছিলাম। কিন্তু সভাপতি হিসেবে তিনি সংক্ষিপ্ততম বক্তব্যটি দিয়েছিলেন। বক্তব্য শেষে উপস্থিত শিল্পীদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি। এমন সৌজন্যবোধ তাঁর মতো অবস্থানে থাকা একজন ব্যস্ত মানুষের কাছ থেকে খুব বেশি দেখা যায় না।
  • কয়েক বছর আগে একটি বিখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁকে রাজি করানো হয়েছিল অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করার জন্য। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বিদেশিও ছিলেন। স্যার তাঁর স্বভাবসিদ্ধ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় অত্যন্ত চমৎকারভাবে বাংলা গানের একটি পরিচিতি তুলে ধরলেন। অনুষ্ঠানে আমি, ফাহমিদা এবং সম্ভবত অদিতি—আমরা গান পরিবেশন করেছিলাম। তিনি পুরো অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসে থেকে আমাদের প্রত্যেকের গানের প্রারম্ভে পরিচয় করিয়ে দিলেন, আমাকে তাঁর ছাত্র হিসেবে উল্লেখ করতেও ভুললেন না। অনুষ্ঠান শেষে রাতের খাবারের ব্যবস্থাও ছিল। তিনি আমাদের টেবিলে বসেই খেলেন, সবারই প্রশংসা করলেন—তাঁর এই অকৃত্রিম স্নেহ ভোলার নয়।
তাঁর মতো একজন প্রজ্ঞাবান অভিভাবক, একজন নিপাট সজ্জন আবার কবে পাওয়া যাবে, কে জানে।