Tuesday, June 2, 2020

  • কে এই জর্জ ফ্লয়েড?
যে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে উত্তাল আমেরিকা, সেই জর্জ ফ্লয়েডের ওপর পুলিশি নির্মমতার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় নিঃশ্বাস নেবার জন্য হাঁসফাঁস করছেন তিনি। তাকে মাটিতে শুইয়ে তার গলা নিজের হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছেন একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। জর্জ ফ্লয়েড বারবার বলেছেন, "আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।"

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে ব্যাপক প্রতিবাদের পর শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এখন হত্যার মামলা আনা হয়েছে।

পুলিশি নির্মমতায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু আমেরিকা জুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ তুলেছে যা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপেও।
কিন্তু কে এই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান যার মৃত্যুর ঘটনায় আমেরিকা জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

টেক্সাসের হুস্টনে বড় হয়ে ওঠেন জর্জ ফ্লয়েড শহরের কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায়।

তার ৪৬ বছরের জীবন ছিল ভাল-মন্দের সংমিশ্রণ। খেলাধূলায় আগ্রহ ছিল জর্জের। তরুণ বয়সে হুস্টনে আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবে বেশ নামডাক হয়েছিল তার। ১৯৯২ সালে টেক্সাস স্টেট চ্যাম্পিয়ানশিপে রানার্স আপ হয়েছিল তার স্কুলের দল- ইয়েটস হাই স্কুল লায়ন্স।

১৯৯০এর দশকে হুস্টনে হিপহপ সঙ্গীত গোষ্ঠির সদস্য হিসাবেও তিনি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।

কিন্তু দারিদ্র, বর্ণবৈষম্য, এবং অর্থনৈতিক অসাম্য তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সামাজিক বঞ্চনার শিকার বহু আফ্রিকান আমেরিকান তরুণের মত জর্জ ফ্লয়েডও জড়িয়ে পড়েন গোষ্ঠি সহিংসতা, এবং আফ্রিকান আমেরিকান গোষ্ঠির বাসস্থানের সংকট নিয়ে নানা সামাজিক আন্দোলনে।

তার ছেলেবেলার বন্ধুরা বলেছেন বিশাল দীর্ঘদেহী ছিলেন জর্জ ফ্লয়েড। ছয় ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার জর্জ একজন প্রতিভাবান অ্যাথলেট ছিলেন। তার বন্ধুরা বলেছেন আমেরিকান ফুটবল আর বাস্কেটবলে তিনি তুখোড় ও দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন। তার এক বাল্যবন্ধু জনাথান ভিল বলেছেন, "এত লম্বা কাউকে আমি দেখিনি। ১২ বছর বয়সে জর্জ ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা ছিল।" তার বর্ণনায় জর্জ ছিলেন, "দৈত্যকায় নরম মনের মানুষ।"

জর্জ ফ্লয়েডের জীবন সাফল্য ও ব্যর্থতার এক করুণ ইতিহাস।
সিএনএন বলছে জর্জ ফ্লয়েড যখন পরে ফ্লোরিডা স্টেট কলেজে পড়তে যান, তখন ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ তিনি স্কুলের বাস্কেটবল দলে ফ্লোরিডা রাজ্যের তরুণ টিমে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

পরে তিনি আবার ফিরে যান হুস্টনে তার স্কুলের শেষ বছরে, এরপর টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেও তিনি ডিগ্রি কোর্স শেষ করেননি।

এসময় জর্জ অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। চুরি এবং অবৈধ মাদক রাখার অভিযোগে বেশ কয়েকবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৭ সালে সশস্ত্র ডাকাতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাকে পাঁচ বছরের জন্য কারাভোগ করতে হয়।

তবে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর জর্জ নিজের জীবন শোধরাতে চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয় এক গির্জার মাধ্যমে সামাজিক কাজে নিজেকে জড়ান তিনি।

২০১৭ সালে তিনি তরুণদের সহিংসতা বন্ধের ডাক দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেন, যে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন সহিংসতা ছেড়ে দিয়ে "ঘরে ফিরে এসো", জানিয়েছেন তার সহপাঠী ও বন্ধু ক্রিস্টোফার হ্যারিস।

"মি. ফ্লয়েড আবার নতুন করে জীবন গড়ে তোলার, নতুন করে বাঁচার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, তার প্রচেষ্টা নিয়ে তিনি খুশি ছিলেন," আমেরিকার মিডিয়ায় বলেন মি. হ্যারিস।

স্যালভেশন আর্মির একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তিনি নিরাপত্তা গার্ডের কাজ নিয়েছিলেন। পরে লরি চালকের কাজ নেন এবং একটি পানশালায় নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করেন। সেখানে সবাই তাকে ডাকত 'বিগ ফ্লয়েড' বা দীর্ঘদেহী ফ্লয়েড নামে।

  • কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হবার পর পানশালা বন্ধ হয়ে যাবার ফলে বহু আমেরিকানের মত জর্জ ফ্লয়েডকেও ছাঁটাই করা হয়।
  • যেদিন তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যেদিন পুলিশের অত্যাচারের কারণে তাকে প্রাণ দিতে হয়, সেদিন পুলিশের অভিযোগ ছিল জর্জ ফ্লয়েড বিশ ডলারের একটা জাল নোট ব্যবহার করে সিগারেট কেনার চেষ্টা করছিলেন।
  • Courtesy - বিবিসি বাংলা
WE WANT JUSTICE,WE WANT JUSTICE, WE WANT JUSTICE

1 comment: